গুড় নিয়ে আমাদের বক্তব্য

দেশি ফেরিওয়ালাতে” যশোরের গুড়-পাটালি

শীত এলেই দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন, বাঙালি মনে পড়তেই হবে যশোরের খেজুর রস, গুড়-পাটালি আর পিঠার কথা। কিন্তু মানুষের লোভের আগুনে পুড়ে গেছে যশোর অঞ্চলের লাখো খেজুর গাছ। তাই চৌকষ গাছিও বেঁচে থাকার তাগিদে পেশা বদলেছেন। যা কিছু খেজুরগাছ এখনো যশোরের ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে, শীত এলে সেগুলো থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছি (রস সংগ্রহকারী) পাওয়া দুষ্কর। ফলে, রস তথা গুড়-পাটালির উৎপাদন কমেছে আশঙ্কাজনক। কিন্তু যশোরের গুড়-পাটালির চাহিদা থেকে গেছে আগের মতোই। এই সুযোগে কিছু অসাধু কারবারি খেজুরগুড়ের সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে দেদারছে বিক্রি করে প্রতি বছর।

সরকারিভাবে যশোর জেলাকে যেভাবে ব্রান্ডিং করা হয়েছে, সেখানেও রয়েছে খেজুর গুড়ের কথা-‘নানা রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা’। এসব কারণেই যশোরের খেজুর রস, গুড়-পাটালির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে যশোরের উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ এগিয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে এই মুহূর্তে অন্যতম “দেশি ফেরিওয়ালা (deshiferiwala.com)

“দেশি ফেরিওয়ালার” প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা রানী সুর বলেন, আমাদের জেলার প্রধান যে ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস, গুড়, পাটালি, তাকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে প্রথমে আমরা একটি সমীক্ষা করি। আমরা দেখতেই পাই, এই ঐতিহ্যটি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া।

দ্বিতীয় কারণটি হলো, খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের ব্যাপারটি বেশ কষ্টকর। নিপুণদক্ষতা না থাকলে ভালো মানের রস-গুড়-পাটালি উৎপাদন করা যায় না। একসময় যেসব দক্ষ গাছি তাদের নিপুণ হাতে এই কাজটি করতেন, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আগে গাছিদের সন্তানরাই বাবার কাছ থেকে শিখে এই কাজ করতেন। এখন অন্য কাজে অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা আয়ের সুযোগ হওয়ায় গাছিদের সন্তানরা আর খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কষ্টসাধ্য কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

এ অবস্থায় যশোরের এ ঐতিহ্য বিলুপ্তির দিকে এগুচ্ছে।’ আমাদের পরিকল্পনা, রস সংগ্রহ, গুড়-পাটালি তৈরির কাজকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তুলতে হবে। তা না হলে কোনোভাবে নতুন প্রজন্মকে গাছ কাটা, রস-গুড় উৎপাদনে আগ্রহী করা যাবে না। কেবল স্থানীয় বাজারে গুড়-পাটালি বিক্রি করলে গাছিরা ভালো দাম পাবেন না। দরকার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।

আমরা ঠিক এই কাজটিই করছি। যশোরে উৎপাদিত গুড়-পাটালি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। গাছিরা যাতে ভালো দাম পান, সেই দিকেও দৃষ্টি রাখা হয়েছে। আমরা deshiferiwala.com” নামে একটি ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে শীত মৌসুমে যশোরের গুড়-পাটালি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে নগর-মহানগরগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে।

তিনি জানান, ২০১৯ সাল থেকে আমরা বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল খেজুরের গুড়-পাটালি সরবরাহ করে আসছি। তবে, শতভাগ বাণিজিকভাবে গুড়-পাটালি বিক্রি আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। বরং যশোরের সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রতি বছর “দেশি ফেরিওয়ালা” এর একটি দক্ষ টিম গুড়-পাটালি নিয়ে কাজ করে আসছে।

দেশি-বিদেশি সংস্থায় আমাদের উপস্থিতি : Asia and the Pacific UN Women Asia Pacific